আজকে ভালবাসা দিবসে ভালবাসা দিবসকে নিয়ে লেখাটা বৃথা। তবুও লিখছি এই আশায় কালকে ক্লান্ত নজরেও যদি কেউ এই লেখাটা পড়ে ফেলে তাহলে আগামী বছর কাজে দিবেঃ
দিন বদলের সাথে সাথে ভালবাসা'র রংও বোধহয় বদলে গেছে। ভালবাসা এখন মনের গভীরতা নয়, টাকার প্রাচুর্যতায় পরিমাপ হয়। এটাকে কি ভালবাসা কয়?
একটা ঘটনা বলি।
আমারই এক ছোট ভাই আজ ভোরবেলায় ১০৩ ডিগ্রি জ্বর শরীরে তুলে বসে আছে। কেন জানেন? একই সাথে যে দু'টো মেয়ের সাথে লাইন মারত, তারা দু'জন নাকি আজ একই সময়ে "ডেট" ফেলেছে! বোঝেন ঠেলা!!
আমার আরেক ছোট ভাই আছে। পুরা লেডি কিলার টাইপের চেহারা। আল্লাহ যদি আমাকে মেয়ে বানাতো তাহলে প্রথম দেখাতেই সম্ভবত আমি তার প্রেমে পড়ে যেতাম। তো এই চেহারার ফায়দা তো সে পুরাপুরি লোটে। তার পাশাপাশি সে আরো একটা গুণ রপ্ত করে ভাল দু'চার পয়সা কামাচ্ছে। ফেসবুকে মেয়ে সেজে ভুয়া আইডি'র ফাদে ফেলে ক'দিন আগে এক ছেলের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা হজম করে ফেলছে!
এটাতো গেল আমার ছোট ভাইদের কথা। আমার বা আপনার না হোক, অন্য কারো এক ছোট্ট বোনের কথা বলি। ছোট্ট বললাম এই কারণে, সে মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে। তার প্রধানতম শখগুলোর একটি হচ্ছে ফেইসবুকে বিভিন্ন ছেলেদের পাঠানো ফ্রেইন্ড রিকুয়েস্ট যাচাই-বাছাই পূর্বক "Accept" করা। আর এই সময়ে সে বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করে। যেমন, "চেহারা ঠিকই আছে কিন্তু হাইটটা একটু কম", "ছাগল নাকি সানগ্লাস পড়ে ছবি তুলসে?", "মনে হচ্ছে এইটা জোশ হবে" ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরপর দু-এক দিনের চ্যাটিং ঝড়, শেষমেষ তার "বিশাল বান্ধবী বহর" নিয়ে কাছের কোন একটা চাইনিজ/ফাস্ট ফুডে গিয়ে ছেলেটার মানিব্যাগের "পোস্ট মর্টেম"। তারপর আরো ক'দিন এদিক সেদিক, নতুন কিছু "এক্সপিডিশন"। চক্রাকারে লেখাটা পড়তে থাকুন।
এই গুলা কি ভালবাসা? যদি উত্তরটা না বোধক হয় তাহলে এই ট্রাডিশন আসল কোথা থেকে? ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি- মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা নাকি সমান কথা। এই ছেলে আর মেয়েগুলোকে এই কথাটা কি কোন ভাবেই শোনানো, বোঝানো সম্ভব না?
আমার এক বন্ধু আছে, বিরল প্রতিভার অধিকারী। ঘড়ি ধরে মাত্র সাড়ে ৩ মিনিটে যেকোন মেয়েকে সে পটাতে পারে তাও মোবাইলে, মেয়ে যদি এর আগে তাকে না দেখেও থাকে তাও নাকি পটে যায়! এই প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সে এখন ভাল টাকাই রোজগার করে। আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আর ভাবতাম কতগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করছে। শুধু তাই না, মেয়ে গুলো এই "পুরুষ" জাতটার উপর বিশ্বাসও তো হারাচ্ছে!
একদিন বাসে করে একসাথে ফিরছিলাম। নানান কথার ভিড়ে সুযোগ বুঝে তাকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, আচ্ছা তুই যে এভাবে একের পর এক মেয়ের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছিস এর ফল কি ভাল হবে? উত্তরটা শুনে চমকে গিয়েছিলাম। বললো, দ্যাখ দোস্ত, প্রথম প্রথম খেলাটাকে ইনজয় করতাম। কিন্তু এখন আমি জানি জীবনে বিয়ে করলে আমি কখনো সুখি হতে পারব না। কারণ, আমার বউকে আমি কখনো বিশ্বাস করতে পারব না!
আমি নাকি পুরাতন মন মানসিকতার লোক, আমার জুনিয়র ফ্রেনডরা বলে। আরো বলে ব্যাকডেটেড। আমার নাকি দ্রুত গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে লেটেস্ট এ্যাপস ডাউনলোড করা আশু প্রয়োজন। আমি শুনি আর মুচকি হাসি। বেশি আর কিইবা বলার আছে?
খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করেঃ
মন নিয়ে ছিনিমিন খেলা খেলে জীবনে কি খুব বেশি সুখ পাওয়া যায়?
খুব বলতে ইচ্ছা করেঃ
ভালবাসা নাই বা দিলে
ক্ষতি নেই তাতে
করোনা ছলনা,
কাছে তুমি নাই বা থাকলে
সুখে থাক এটাই মোর কামনা।.....
ভালবাসা দিবসটা সবার জীবনে আরো অনেক বেশি ভালবাসা বয়ে আনুক এটাই কামনা করি।
আর শুধু একটা কথা বলতে চাই-ভালবাসুন প্রাণ খুলে, তবে সাবধানে, দেখেশুনে।
ভালবাসার জয় হোক।
Post a Comment
To Leave A Comment, Please Reply Here